বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, একুশের কণ্ঠ:: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম সুসংহত করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এক বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তিনটি প্রধান পর্যায়ে- তফসিল ঘোষণার পূর্বে, নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
এ সময় অন্য চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির সিনিয়র সচিব এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিন ধাপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা
তফসিল ঘোষণার পূর্বে : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে চিহ্নিত অপরাধী, সন্ত্রাসী এবং নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচন পর্যন্ত : এই সময়কে নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সকল প্রার্থীর নির্বিঘ্ন প্রচার-প্রচারণা এবং ভোটারদের নিরাপদে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আমর্ড পুলিশ, ব্যাটালিয়ন আনসার এবং সশস্ত্র বাহিনী মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত থাকবে। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এসব বাহিনী ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনি এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে।
নির্বাচন পরবর্তী সময় : ভোটগ্রহণ শেষে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সম্ভাব্য সহিংসতা রোধে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স সক্রিয় থাকবে। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আইনগত নির্দেশনা প্রদান করবেন এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি সংক্ষিপ্ত বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম
ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রতিষ্ঠান বাছাই সম্পন্ন হয়েছে।
বিশেষ নির্দেশনা ও নিষেধাজ্ঞা
শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা : তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটগ্রহণের কয়েক দিন পর পর্যন্ত প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ও সারাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হবে।
সমন্বয় ও সুসংহতকরণ : আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার, দফাদার এবং ইউপি সচিবদের সম্পৃক্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সংখ্যালঘু নিরাপত্তা : সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং নাশকতা রোধে সতর্ক নজরদারি বজায় রাখতে হবে।
অবৈধ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ : নির্বাচনি এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ব্যবহারকারীদের দমনে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে। তফসিল ঘোষণার পর বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশনা দেয়া হবে।
এআই নির্ভর অপপ্রচার রোধ : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর তথ্য প্রচার রোধে কার্যকর কৌশল গ্রহণ করা হবে। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
বিদেশী পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা : বিদেশী পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের নিরাপদে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় আইনানুগ সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।
পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থাপনা : প্রবাসী ও পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানে যোগ্যদের জন্য নিরাপত্তাসহ পোস্টাল ব্যালট পেপার প্রেরণ ও সংগ্রহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ডাক বিভাগ ও রিটার্নিং অফিসারদের সমন্বয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন : ‘In Aid to the Civil Power‘ নীতিমালার আওতায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো ত্রয়োদশ নির্বাচনেও সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ : নির্বাচনি এলাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি, গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং অননুমোদিত কার্যক্রম প্রতিরোধে ড্রোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।